বিক্ষোভ সামলাতে গণগ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে

ইসরায়েলের গাজায় হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীরা অস্থায়ী তাঁবু করেছে। ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ইয়েল, কলম্বিয়া, বার্কেলে থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ সামলাতে গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভের বিষয়ে প্রথমবারের মতো বড় সংবাদ শিরোনাম হয় গত সপ্তাহে। তখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ডাকে। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ১০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার করে। এরপর সোমবার (২২ এপ্রিল) সব ক্লাস সশরীরের পরিবর্তে অনলাইনে হওয়ার ঘোষণা দেয় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিকে ‘ভীতি ও হয়রানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ডা. মিনুছে শফিক। তিনি বিক্ষোভকারীদের বহিরাগত বলেও অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তার এ অভিযোগ সত্যি কি না, তা যাচই করতে পারেনি বিবিসি।

সোমবার রাতে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ডাকা হয়। পুলিশ সেখানেও গণগ্রেপ্তার করে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা অস্ত্র তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি দখলদারদের সমর্থক কোম্পানির তহবিল বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার সকালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ ডাকে কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বার্কেলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, ইমার্সন ও টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁবু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান বিক্ষোভ সম্পর্কে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞেস করা হয়। প্রেসিডেন্ট ইহুদিবিরোধী বিক্ষোভ এবং যারা ফিলিস্তিনিদের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করছে না, তাদের সমালোচনা করেন।

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি ও মুসলিম বিদ্বেষ উভয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের জন্য নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু গাজায় চলমান অভিযানে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের জোগানদাতা, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্র সেদিকে তেমন একটা কর্ণপাত করছে না।  গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলের সীমানা বেড়া টপকে, প্যারাসুটে করে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। হামাস জিম্মি করে আরও প্রায় ২৫০ জনকে।  এ হামলার কয়েক ঘণ্টার মাথায় গাজায় যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরপর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। এখন পর্যন্ত গাজায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। স্থানচ্যুত হয়েছে উপত্যকাটির ২৩ লাখ মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশ। দেশটির প্রায় শতভাগ মানুষ খাদ্যসংকটে রয়েছে। ইতিহাসের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলটি।