ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা এই হামলায় নিহত হয়েছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। তবে গাজায় নিহতের সংখ্যা যা দেখানো হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি বলে জানিয়েছে একটি গবেষণা প্রতিবেদন।
এমনকি গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা বর্তমানে সামনে আসা সংখ্যার চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি বলেও জানানো হয়েছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১ শতাংশ কম রিপোর্ট করা হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় চলমান সংঘাতে ভূখণ্ডটির জনসংখ্যার ৩ শতাংশ মারা গেছে বলে শুক্রবার প্রকাশিত নতুন সমীক্ষায় বলা হয়েছে।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এলএসএইচটিএম)-এর গবেষকদের একটি স্বাধীন সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৪ হাজার ২৬০ জনের আঘাতজনিত মৃত্যু হয়েছে। যদিও গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই যুদ্ধে ৩৭ হাজার ৮৭৭ জনের নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল।
মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এই গবেষলার ফলাফলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ চলমান এই সহিংসতার কারণে মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষ।
আনাদোলু বলছে, গবেষকরা আঘাতজনিত আঘাতের মৃত্যুর সংখ্যা অনুমান করতে “ক্যাপচার-রিক্যাপচার অ্যানালাইসিস” নামে পরিচিত একটি পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এবং তথ্যের উৎসগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ও হাসপাতালের মর্গের রেকর্ড, অনলাইন জরিপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত মৃত্যুর তথ্যও রয়েছে।
সমীক্ষা অনুসারে, আঘাতজনিত মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য আন্ডার রিপোর্টিং গাজার স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর অবনতি এবং চলমান সহিংসতার মধ্যে নিহতের সংখ্যা গণনা করতে অক্ষমতাকেই সামনে তুলে ধরে।
আনুমানিক আন্ডার রিপোর্টিং হারের ওপর ভিত্তি করে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ট্রমাজনিত আঘাতের মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হয়, যা সেই সময়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ৪২ হাজার বলে জানিয়েছিল।
এতে বলা হয়েছে যে গাজায় সামগ্রিক মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে কারণ গবেষণার বিশ্লেষণে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অপর্যাপ্ত পানি ও স্যানিটেশন এবং রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে সেসব তথ্য এই সমীক্ষায় উঠে আসেনি।
এলএসএইচটিএম-এর প্রধান লেখক জেইনা জামালুদ্দিন বলেছেন, “সমীক্ষার এই ফলাফলে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আরও প্রাণহানি রোধ করতে হস্তক্ষেপের যে জরুরি প্রয়োজন রয়েছে তার ওপরই জোর দিচ্ছে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। এছাড়া গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গত বছরের নভেম্বরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।