ইটালির নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে বিভক্ত আলবেনীয়রা

বেশ কয়েক মাস ধরে ইটালির জর্জা মেলোনি সরকার অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের অপর প্রান্তে অর্থাৎ আলবেনিয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করছে। যার লক্ষ্য ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া হাজার হাজার অনিয়মিত অভিবাসীদের একাংশকে রেখে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া করা। তবে এই চুক্তি নিয়ে আলবেনীয় নাগরিকদের বিরূপ মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।

রোম এবং তিরানার মধ্যে সম্পন্ন চুক্তি অনুসারে, আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত শেনজিন বন্দরে বছরে ৩৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে নামানো হবে। ইটালি এবং আলবেনিয়া প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।

নির্মানাধীন কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়াকরণ করা হবে এবং আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হবে। আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও দেশটির বিরোধী দল চুক্তিটি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

এছাড়া সাধারণ আলবেনীয়রা ইতিমধ্যে দেশটিতে ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে বেশ দ্বিধা বিভক্ত। সামগ্রিকভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ অসন্তুষ্ট এবং সর্বোপরি তাদের ভূখণ্ড অভিবাসন ইস্যুতে একটি ‘হটস্পটে’ রূপান্তরিত হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালের সাংবাদিকেরা আশ্রয়কেন্দ্রের পাশ্ববর্তী এলাকাগুলো ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছে। চুক্তি অনুসারে দুটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি নির্মিত হচ্ছে উত্তর আলবেনিয়ার কাকারিক পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত গজদার এলাকায়।

দ্বিতীয় কেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে রাজধানী তিরানা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত শেনজিন বন্দরে। যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের ইটালীয় জাহাজ থেকে নামানো হবে।

শেনজিন শহরটি প্রকৃতপক্ষে উত্তর আলবেনিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক জোনগুলোর একটি। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, তাদের অঞ্চলে আশ্রয়প্রার্থী এবং উদ্বাস্তুদের আগমন বিদেশি পর্যটক সংখ্যার উপর বড় প্রভাব ফেলবে।

তারা ইটালি এবং গ্রিসের পর্যটন এলাকা লাম্পেদুসা এবং লেসবোসকে উদাহরণ ধরে তাদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় বেশিরভাগ বাসিন্দারা বলেছেন, তারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা পক্ষে না। কিন্তু খুব কম লোকই আছেন যারা দেশটির ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রী এডি রামার পছন্দের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনার সাহস করবেন। তবে রাজধানী তিরানায় বেশ কিছু অধিকারকর্মী এই চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্ব হারাবে বলে নিন্দা বিক্ষোভ করেছে।

বিরোধী রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর যুক্তির প্রতি সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে। আবার অনেকের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী এডি রামা ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্মা মেলোনির সাথে বিশেষ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন। যার কারণে তিনি ইটালির বিশেষ অনুরোধে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন।

যুক্তি হিসেবে আলবেনীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯০ এর দশকের কথা উল্লেখ করছেন, যখন তিরানায় কমিউনিস্ট শাসনের পতনের পর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার আলবেনিয়ান অ্যাড্রিয়াটিক সাগর পার হয়ে ইটালিতে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই ঘটনার ‘ঋণ’ হিসেবে ইটালির বিপদে সহায়তা করতে রাজী হয়েছেন তিনি।

৯০ এর দশকে ইটালি আসা আলবেনীয়দের মধ্যে অনেকেই ইটালিতে নতুন জীবন গড়তে পেরেছেন।

বর্তমানে অনেক আলবেনীয়দের পরিবারের সদস্যরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে আছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া লোকদের সাথে একাত্মতা দেখান।

আলবেনিয়ান সমাজ মূলত একটি সহনশীল ও বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। দেশটিতে কট্টর ডান পন্থার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। যার কারণে অনেক মানুষ অভিবাসীদের ইটালি যাওয়া আটকে দিয়ে আলবেনিয়ায় রাখার বিপক্ষে।

যেসব দেশকে ইটালি ‘নিরাপদ’ বলে মনে করে সেসব দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ায় পাঠাতে পারবে রোম। বর্তমানে বাংলাদেশ, মিশর, আইভরি কোস্ট এবং টিউনিশিয়াসহ মোট ২১টি দেশ নিরাপদ তালিকায় আছে।

২০২৩ সালে এই চারটি দেশ থেকে মোট ৫৬ হাজার ৫৮৮ জন অভিবাসী ইটালিতে এসেছেন।

অবশ্য জর্জা মেলোনি বলেছেন, অন্তঃসত্ত্বা, অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী এবং ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের আলবেনিয়ায় পাঠানো হবে না।

রোম এবং তিরানার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, চলতি বছরের ২০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রগুলো চালুর কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজের সময়সূচী পিছিয়ে পড়লে জর্জা মেলোনি আগামী ১ আগস্ট থেকে চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

সূত্র : ইনফোমাইগ্র্যান্টস