ফ্রান্সে একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে পালিয়েছে ১০ অভিবাসী

ফ্রান্সের দক্ষিণে হেরো অঞ্চলের একটি প্রশাসনিক আটক কেন্দ্র (সিআরএ) বা ডিটেনশন সেন্টারে থেকে পালিয়ে গেছে ১০ অভিবাসী৷ পলাতকদের মধ্যে একজনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে৷

প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রটি দক্ষিণ ফ্রান্সের সেতে শহরে অবস্থিত৷ শুক্রবার (১০ মে) থেকে শনিবার (১১ মে) রাতের মধ্যে অভিবাসীরা পালিয়ে গেছেন পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ফরাসি গণমাধ্যম সিনিউজ৷

একই সূত্র অনুসারে, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কেউই জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি এবং অপরাধমূলক কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ‘ফিসিয়ের এস’-এ তালিকাভুক্ত নয়৷

রোববার (১২ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনে সিনিউজ জানায়, পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে একজনকে মপলিয়ে শহরের ট্রেন স্টেশন থেকে আটক করা হয়েছে৷

ফ্রান্সে অনিয়মিত অবস্থায় আটক ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে থাকা অভিবাসীদের ফরাসি প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রে (সিআরএ) রাখা হয়৷

সেতে শহরের আটক কেন্দ্রটিতে কর্মী সংকট এবং একটি ত্রুটিপূর্ণ অ্যালার্ম সিস্টেমের কারণে অভিবাসীরা পালিয়ে যেতে সম্ভব হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

অভিবাসীরা পালানোর আগে একটি কক্ষে জড়ো হয়ে সিলিংয়ের লোহা কাটার জন্য ব্যবহৃত ব্যবহার যন্ত্র করেছিল৷ তারা দ্রুত ছাদে পৌঁছে সেখান থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় চলে গেছেন৷

ফরাসি সরকারের ২০২৩ সালের বাজেট পরিকল্পনায় প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রে (সিআরএ) বা ডিটেনশন সেন্টারের ধারণ ক্ষমতাও বাড়ানোর জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা বলেন, ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ১১টি শহরে নতুন আটককেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ফরাসি শহর দিজো, নন্ত, এক্স-অঁ-প্রভন্স, ডানকের্ক, ওয়াজেল, বেজিয়ের, গুজাইনবেল, নিস, অলিভে, মেরিনাক ও মায়োত দ্বীপে এসব কেন্দ্র স্থাপনের কথা রয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে এসব কেন্দ্রে রাখা অভিবাসীর সংখ্যা এক হাজার ৪৮৮ থেকে এক হাজার ৯৬৯ জনে উন্নীত করা হয়েছে।

জেরাল্ড দারমানা ২০২৭ সালের মধ্যে আটক কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা তিন হাজারে উন্নীত করতে চান৷

ফরাসি প্রশাসনিক আটককেন্দ্রগুলোতে সার্বিক অবস্থা নিয়ে ফরাসি প্রশাসনিক দপ্তর (সিজিএলপিএল) গত বছরের শেষ দিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷

ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত ছয়টি আটক কেন্দ্র, বিমানবন্দরগুলোতে অবস্থিত তিনটি অস্থায়ী অপেক্ষা কেন্দ্র এবং উত্তর ফ্রান্সের ‘তুর্কুয়া’ শহরের স্থানীয় আটককেন্দ্র বেশ কয়েকবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন সিজিএলপিএল এর প্রধান পরিদর্শক ডমিনিক সিমোনো৷

এই সাবেক সাংবাদিক ও আইনজ্ঞ ২০২০ সাল থেকে ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সুপারিশে সিজিএলপিএল’র প্রধান পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন৷

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটককেন্দ্রগুলোতে থাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের আটকের মেয়াদ নিয়মিত বাড়ানো হয়েছে৷ করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন সীমান্ত বন্ধ থাকায় অভিবাসীদের নিজের দেশে ডিপোর্ট বা বহিষ্কার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল৷ অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীদের গন্তব্য দেশের দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকে ভ্রমণ পাস ইস্যু করতে অনীহা থাকার বহিষ্কারের সম্ভাবনা আটকে গিয়েছিল৷

আটক কেন্দ্রগুলোর শোচনীয় অবস্থার নিন্দা জানিয়ে সিজিএলপিএল জানায়, “নানা অসুবিধার পরও বন্দিদের একঘেঁয়েমি, নিষ্ক্রিয়তা এবং উদ্বেগের সমস্যা দূর করতে ভবনগুলোর সংস্কার কিংবা নিয়মের পরিবর্তন কোনোটিই করা হয়নি৷’’

সিআরএগুলোতে শিশুদের আটক রাখার অভিযোগে ২০১২ সাল থেকে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত ১১ বার ফ্রান্সকে নিন্দা করেছে৷